একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগে ফুল মার্ক্স ৭০ নাকি ৮০? স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্মী, প্রমাণিত অযোগ্যরাও কেন তালিকায়?? প্রশ্ন হাজার, বিভ্রান্তি অনেক! সেগুলির সহজভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলাম এই পোস্টে।
বিতর্কের প্রেক্ষাপট (SLST XI-XII)
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি বাতিল হয়ে যায় প্রায় ১৭০০০ শিক্ষক-শিক্ষিকার। (অশিক্ষক কর্মী নিয়ে মোট ২৬০০০)। কিন্তু নির্দেশ দেওয়া হয় নতুন করে আবার পরীক্ষা নিতে হবে, যাতে আবেদন করতে পারবেন নতুন প্রার্থী ও চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে, যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে তারা পরীক্ষায় বসবেনা।
সেই নির্দেশ মত ২৯শে মে ২০২৫ একটি গেজেট প্রকাশ করা হউ, যাতে নিয়োগের সমস্ত নিয়মাবলি লেখা আছে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, এই গেজেটের সমস্ত সীদ্ধান্ত নিয়োগকর্তা নিয়ে থাকেন, এবং এই গেজেটের কোনও নিয়মের বিরুদ্ধে আদালতে গেলে লাভ কিছু হয়না। কিন্তু গেজেটের নিয়ম বহির্ভূত কাজ করলে তখন আদালত হস্তক্ষেপ করে। তাই আজ আমরা আলোচনা করব এই গেজেট নিয়েই, দেখব কোন কোন নিয়ম মানা হয়েছে আর কোনগুলি মানা হয়নি।
মূল সমস্যার সূত্রপাত
এই গেজেটে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়ার উল্লেখ থাকে। কিন্তু এতে নতুন চাকরিপ্রার্থীরা বঞ্চিত হতে পারে এই ভয়ে আদালতে মামলা করা হয়। কিন্তু যেহেতু আগেই লিখেছি গেজেটের নিয়ম বদল আদালতের কাজ নয়, তাই আদালত সেই মামলা ফিরিয়ে দেন। সুপ্রিম কোর্টও এই ব্যাপারে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। তবে এটা উল্লেখ করে দেওয়া হয়, একটিও প্রমাণিত অযোগ্য এই নিয়োগে সুযোগ পেলে তার ফল ভালো হবেনা।
বর্তমান চিত্র ও সমস্যা
এবার আসা যাক বর্তমান সমস্যা ও বিতর্কে। সোশাল মিডিয়ায়, টিভি চ্যানেলে ও বিভিন্ন ভাবে যে বিতর্কগুলি উঠে আসছে সেগুলি হল-
১। ইন্টারভিউর আগেই ভেরিফিকেশনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এবং সেখানে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বাবদ ১০ নাম্বার যোগ করায় খুবই কম সং্খ্যক নতুন প্রার্থী সুযোগ পেয়েছেন, এবং তাদের মতে এটি ভুল এবং বেয়াইনি।
২। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী ও রাজ্যের স্কুল ছাড়াও অন্যান্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এই ১০ নাম্বার পেয়েছেন, যা সঠিক নয়।
৩। এই তালিকায় কিছু প্রমাণিত অযোগ্যের নামও পাওয়া গেছে, যা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থি।
এবার আমরা এই তিনটি বিষয় এবং গেজেট নিয়ে আলোচনা করব।
অভিজ্ঞতার ১০ নাম্বার কখন যোগ করা হবে?
গেজেটের (WB(Part-I)/2025/SAR-247 dated May 29, 2025) Rule 2(k) তে উল্লেখ আছে, ইন্টারভিউর জন্য তালিকা প্রকাশ করা হবে, তাতে নম্বর হিসেবে যোগ করা হবে ও.এম.আর. এর নম্বর এবং অ্যাকাডেমিকের নম্বর, এবং এই মোট নাম্বারের ভিত্তিতে মোট শুন্যপদের ১.৬ গুণ প্রার্থীকে প্রথম তালিকায় রাখা হবে।

এবার আসা যাক ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বলতে কত নাম্বার বোঝানো হয়েছে! Schedule II এর Section-B তে পরিষ্কার ক্ক্রে উল্লেখ আছে Academic Score = Education Qualification (10) + Teaching Experience (10)

তাই যারা বলছেন মোট নাম্বার ৭০ (ও.এম.আর= ৬০, অ্যাকাডেমিক=১০), তারা ভুল বলছেন এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আসলেই গেজেট অনুসারে মোট নাম্বার ৮০ (ও.এম.আর=৬০, অ্যাকাডেমিক=২০), এবং এই নাম্বারের ভিত্তিতেই ইন্টারভিউতে ডাকার কথা বলা আছে গেজেটে।
স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন ডাক পেলেন?
আবেদন যখন করা হয়, তখন যেকোনও প্রার্থী যেকোনওভাবে আবেদন করতে পারে, তাতে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্যও দেওয়া সম্ভব। যারা নিজেরা আবেদন করেছেন তারা এটা জানেন যে ওখানে একটা অপশন ছিল, যদি আপনি অভিজ্ঞতার নাম্বার পেতে চান তাহলে একটা টিক-বক্সে ক্লিক করতে হত। ওখানে কোনও ডকুমেন্ট চাওয়া হয়নি। আর শুধু এই রাজ্য নিয়, দেশের কোনও পরীক্ষাতেই আবেদনের সময় ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন হয়না। এই তালিকা আবেদনের ভিত্তিতেই তৈরি করা, কেউ ভুল তথ্য দিয়ে আবেদনের সুযোগ নিয়ে থাকলে তা বোঝার উপায় কার্যত থাকেনা।
আর সেই ভুয়ো আবেদনকারীদের ধরার জন্যই ইন্টারভিউর আগে ভেরিফিকেশন করে নিতে চাইছে কমিশন। তাই এই তালিকায় যাতা স্বাস্থ্যকর্মী বা অন্য ক্ষেত্রের কর্মী আছেন, তারা ভেরিফিকেশনের পর বাতিল হয়ে যাবেন।
আর রাজ্যের স্কুল ছাড়া অন্য স্কুলের অভিজ্ঞতার জন্য যারা নাম্বার পেয়েছেন, সেটা গেজেট মেনেই হয়েছে (গেজেটের Schedule-II, Section-B অনুযায়ী, যেকোনও সরকারী ও সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা হলেই এই নম্বর পাওয়া যাবে, এখানে এই রাজ্যেরি হিতে হবে তার উল্লেখ নেই)।
এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে ১৯৮৭ সালে জন্ম হয়েও অভিজ্ঞতায় ১০ পেয়েছেন! এটিও যাচাই করা হবে বলেই মনে করি, আবেদনের সময় এটিও যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ভুল থাকলে ওনারও আবেদন বাতিল করা হতে পারে।
প্রমাণিত অযোগ্য, অথচ তালিকায় নাম
এখানেও উপরের যুক্তিগুলিই প্রযোজ্য। কোনও অযোগ্য যদি নিজের এই পরিচয় গোপন করে, রোল নাম্বার গোপন করে নতুন প্রার্থী হিসেবে আবেদন করে তা যাচাইপ্রক্রিয়ার আগে বোঝা সম্ভব নয়। যদি এরকম কেউ থেকে থাকে, তাদের নামও যাচাই প্রক্রিয়ায় বাতিল হয়ে যাবে।
এই বিতর্কের সমাধান কী?
সমাধান একটাই বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুবিধাবাদী ব্যক্তিত্ব বা কোচিং সেন্টারের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে নিজের বুদ্ধি কাজে লাগান। যেকোনও পরীক্ষায় আবেদন করার আগে সেই পরীক্ষার নিয়মগুলি (গেজেট) অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। সেই নিয়ম যদি পছন্দ না হয়, তাহলে হাতে শুধু দুটি উপায়-
১। ওই পরীক্ষায় না দেওয়া।
২। গেজেট প্রকাশের পরেই তীব্র আন্দোলন করে সরকারকে বাধ্য করা ওই নিয়ম পরিবর্তন করা।
কিন্তু May 2025- এর নিয়ম মেনে নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে November 2025-এ এসে ফলাফলের পর নিয়মের বিরোধীতা করা খুবই বোকামী ও নিয়ম বহির্ভূত।
তবে এখনও আর একটি উপায় আছে, সেটি হল শুন্যপদ বাড়ানো! যেটি গেজেটে উল্লেখ করা থাকেনা, অর্থাৎ নিয়োগের আগে পর্যন্ত সরকার চাইলে শুন্যপদ বাড়াতে পারে। আর সেই শুন্যপদ বাড়লে পুরনো শিক্ষক-শিক্ষিকার পাশাপাশি নতুনরাও সুযোগ পাবে বলে মনে করি।