নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhash Chandra Bose) এবং আজাদ হিন্দ ফৌজ (Indian National Army) সম্পর্কিত ১৫টি কম প্রচলিত বা অজানা তথ্য
১. আজাদ হিন্দ ফৌজের মূল প্রেরণা
- আজাদ হিন্দ ফৌজের মূল ভিত্তি ছিল ভারতীয় সৈন্য যারা সিঙ্গাপুর ও মালয়াতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে জাপানের হাতে বন্দি হয়েছিল। নেতাজী এই সৈন্যদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে INA-তে অন্তর্ভুক্ত করেন।
২. সুভাষচন্দ্র বসুর পালানোর গোপন পথ
- ১৯৪১ সালে, নেতাজী ব্রিটিশদের গৃহবন্দিত্ব থেকে পালানোর জন্য নিজেকে শিখ ধর্মাবলম্বী একজন ব্যক্তির বেশ ধারণ করেন। তিনি “মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন” নামে নিজেকে পরিচিত করেন এবং কাবুল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছান।
৩. নেতাজীর গোপন রেডিও স্টেশন
- নেতাজী জার্মানিতে “আজাদ হিন্দ রেডিও” নামে একটি গোপন রেডিও স্টেশন চালু করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতেন এবং ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার বার্তা পাঠাতেন।
৪. আজাদ হিন্দ সরকার: ভারতের প্রথম স্বাধীন সরকার
- ১৯৪৩ সালে গঠিত আজাদ হিন্দ সরকার ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকা ভারতের প্রথম স্বাধীন সরকার ছিল।
- এই সরকারকে ১১টি দেশ স্বীকৃতি দেয়, যার মধ্যে ছিল জার্মানি, জাপান, ইতালি, থাইল্যান্ড এবং বার্মা।
৫. আজাদ হিন্দ ফৌজের পতাকা ও শপথ
- আজাদ হিন্দ ফৌজের পতাকায় একটি বাঘের চিত্র ছিল, যা শক্তি ও সাহসের প্রতীক।
- ফৌজের সদস্যরা শপথ নিতেন: “আমি কেবল ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়ব এবং প্রয়োজনে নিজের জীবন উৎসর্গ করব।”
৬. নেতাজীর মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক
- নেতাজীর বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি এখনো ধোঁয়াশায় ঢাকা। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইপেহ বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বলে দাবি করা হয়, তবে এ নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে।
- কিছু দাবি অনুসারে, তিনি সন্ন্যাসী হয়ে বেঁচে ছিলেন এবং ভারতের স্বাধীনতার পরে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান।
৭. মহিলা রেজিমেন্ট: ঝাঁসির রানী বাহিনী
- এটি ছিল বিশ্বের প্রথম নারী সেনাবাহিনী, যা সশস্ত্রভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল।
- রেজিমেন্টটি ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সহগলের নেতৃত্বে পরিচালিত হতো।
৮. ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও…’ এর আসল প্রেক্ষাপট
- ১৯৪৪ সালে বার্মায় (মায়ানমার) একটি জনসভায় নেতাজী এই ঐতিহাসিক উক্তি করেন।
- এটি মূলত আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্য এবং সাধারণ জনগণকে মুক্তি সংগ্রামে প্রাণপণ লড়াইয়ের জন্য উৎসাহিত করার ডাক ছিল।
৯. নেতাজীর বিশেষ পাসওয়ার্ড
- জার্মানি এবং জাপানের মধ্যে যাতায়াত করার সময় নেতাজীর কোড নাম ছিল “Tatul”। এটি গোপন নথিপত্র আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হতো।
১০. ‘দিল্লি চলো’ স্লোগানের ইতিহাস
- নেতাজীর দেওয়া “দিল্লি চলো” স্লোগান আজাদ হিন্দ ফৌজের সবচেয়ে পরিচিত ডাক হয়ে উঠেছিল। এটি ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দখল করার প্রতীকী লক্ষ্য।
১১. আজাদ হিন্দ ফৌজের মুদ্রা ও ডাকটিকিট
- আজাদ হিন্দ সরকার তাদের নিজস্ব মুদ্রা এবং ডাকটিকিট চালু করেছিল। এই মুদ্রা এবং ডাকটিকিট স্বাধীন ভারতের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
১২. ইংরেজদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি
- আজাদ হিন্দ ফৌজের কার্যকলাপ ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ভারতীয় সেনাদের আনুগত্য নষ্ট করেছিল।
- INA’র সদস্যদের বিচার (Red Fort Trials) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি করে এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তীব্র গতি আনে।
১৩. নেতাজীর প্রভাবিত বক্তৃতা
- নেতাজীর কণ্ঠ এত প্রভাবশালী ছিল যে, তার বক্তৃতা শুনে বহু মানুষ INA-তে যোগদান করেছিলেন।
- তাঁর ভাষণগুলোর মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং ত্যাগের এক অদম্য চেতনা পাওয়া যেত।
১৪. INA ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিদ্রোহ
- ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ-ভারতীয় নৌবাহিনীতে “নৌবিদ্রোহ” ঘটেছিল, যার পেছনে INA এবং নেতাজীর কর্মকাণ্ড প্রধান প্রভাব ফেলেছিল।
১৫. নেতাজী ও গান্ধীজীর পার্থক্য
- যদিও নেতাজী ও গান্ধীজী দু’জনই স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, তবে তাঁদের পথ ছিল ভিন্ন।
- গান্ধীজী অহিংসার পথ বেছে নিলেও নেতাজী সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন।